এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট
আদিতমারি উপজেলা আওয়ামি লীগে হাইব্রীড আর ত্যাগীদের দ্বন্দের কারনে গ্রুপিং এখন প্রকাশ্য আকার ধারন করেছে,অপরদিকে আওয়ামিলীগের দ্বন্দ্বের জের কাজে লাগিয়ে উপজেলা বিএনপি অফিস নতুন করে সাজানো হয়েছে,বিএনপি নেতা কর্মীরা তাই উচ্ছসিত।আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে আগামী নির্বাচনে ভোটের উপর প্রভাব পড়বে বলে দলের সাধারন কর্মীরা মনে করছেন।
আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত,লালমনিরহাট ০২ সংসদীয় আসন আদিতমারি ও কালিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত,
ভোটের রাজনিতিতে সমাজকল্যান মন্ত্রী নিজের আসন হিসেবে কালিগঞ্জ ও আদিতমারি রাজনিতী নিয়ন্ত্রন করেন,কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগ সভাপতি সমাজকল্যান মন্ত্রী নিজেই,আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের রাজনিতী নুরুজ্জামান আহমেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পুর্বে প্রয়াত সামছুল ইসলাম সুরুজ,২০০৩সালে সুরুজ হত্যার পর তার ভাই সওকত হোসেন ও জেলা কমিটির সহ সভাপতি সিরাজুল হক নিয়ন্ত্রন করতেন।
নুরুজ্জামান আহমেদ ২০০৮ সাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর আদিতমারি উপজেলার রাজনিতীতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।শহীদ সামছুল ইসলাম সুরুজের ছোট ভাই সওকত হোসেন মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে তিনজন সহসভাপতি কে পাশ কাটিয়ে রবিউল ইসলাম মানিক কে সভপতি করা হয়।গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আদিতমারি উপজেলা আওয়ামি লীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল আলম কে নুরুজ্জামান আহমেদের কাছের লোক হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়,নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শহীদ সামছুল ইসলাম সুরুজের পুত্র ইমরুল কায়েস প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
নির্বাচনের তারিখ কয়েক দফা পিছিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পরাজয় ঠেকানো যায়নি,বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরুল কায়েস ফারুখ বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।নির্বাচনের পূর্বে নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থক দের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।বিজয়ী হবার পরে ইমরুল কায়েস ফারুখ সমাজকল্যান মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হন বলে অভিযোগ করেন তার সমর্থকরা,সর্বশেষ চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার পিছনে মন্ত্রীর হাত ছিল এমন অভিযোগ করেন ইমরুল কায়েস ফারুখ নিজেই।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পদিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন শহীদ সামছুল ইসলাম সুরুজের ছোট পুত্র ওমর চিশতি।তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় তার পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসুচী পালন করেন দলের তৃনমুলের নেতা কর্মীরা।শোনা যায় সমাজকল্যান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হয় ওমর চিশতির হাতে।ওমর চিশতি বিপুল ভোটে বিজয়ী হলে আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগে ঐক্যের সুবাতাস বইবার সম্ভবনা দেখেন নেতা কর্মীরা,কিন্তু বেশী দিন না যেতেই আদিতমারী আওয়ামিলীগের ঐক্যের ছেদ পড়ে।
উপজেলা সম্মেলন কেন্দ্র করে ইউনিয়ন কমিটি গঠনে পুরাতন সকলকে বাদ দিয়ে সমাজকল্যান মন্ত্রীর অনুসারীদের পদ দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠার পর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নেয়,এনিয়ে পাল্টা পাল্টি কর্মসূচী পালন করে উভয় গ্রুপ।গত ০৮অক্টোবর আদিতমারি উপজেলা সম্মেলন ডাকা হয়।সম্মেলন মাঠে সমাজকল্যান মন্ত্রীর অনুসারীরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নেতা কর্মী নিয়ে আসে সম্মেলন মাঠে, সম্মেলন শেষ হবার আগেই মাঠ ছেড়ে দেয় তারা।কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে শেষ পযন্ত সম্মেলন মাঠ দখলে রাখেন ওমর চিশতির অনুসারীরা।কেন্দ্রীয় নেতারা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সম্মেলন মাঠে কমিটি ঘোষনা না দিয়ে সার্কিট হাউসে আসেন।কেন্দ্রীয় নেতা শাজাহান খান এবং সাখোয়াত হোসেন সফিক রাতভর বৈঠক করেন, ভোর রাতে কেন্দ্রীয় নেতারা মোহাম্মদ আলী কে সভাপতি এবং ওমর চিশতি কে সাধারন সম্পাদক হিসেবে ঘোষনা দিতে চাইলে জেলার নেতারা এই সিদ্ধান্ত বয়কট করে চলে যান,ফলে কেন্দ্রীয় নেতা গন ঘোষনা ছাড়াই লালমনিরহাট ত্যাগ করেন।
পরবর্তীতে কেন্দ্রের অনুমোদন নিয়ে জেলার নেতারা মোহাম্মদ আলী কে সভাপতি এবং রফিকুল আলম কে সাধারন সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষনা করে। উক্ত কমিটিতে সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ব্যাক্তিগত সহকারি সাবেক ছাত্রনেতা কে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তৃনমুল নেতা কর্মী ঘোষিত সাধারন সম্পাদক পদ প্রার্থী ওমর চিশতিকে নতুন কমিটিতে কোন পদ দেওয়া হয়নি, কমিটি গঠন ঘিরে আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের রাজনিতী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।পদবঞ্চিত আওয়ামিলীগ নেতা কর্মীরা আদিতমারি উপজেলায় সড়ক অবরোধ সহ নানা কর্মসূচী পালন করে।
এর ধারাবাহিকতায় গত ২৬ নভেম্বর নবগঠিত আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগ বিএনপি ও জামাত বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়।আওয়ামিলীগের অপর গ্রুপের নেতা কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ বেষ্টনির ভিতরে অবস্থান নেন।এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃমতিয়ার রহমানের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রুপ,এতে পুলিশ সহ ৩০ জন আহত হয়।২৭ নভেম্বর আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগ কার্যলয়ের সামনে পদবঞ্চিত নেতা কর্মীবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেন,উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি এবং বিএনপি নেতার পুত্র ও শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে মামলা বাদীর পুত্র বর্তমানে আওয়ামিলীগ সাধারন সম্পাদক নির্বিচিত হয়েছেন,এছাড়া মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত সহকারি এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়েছেন।পদবঞ্চিতরা হাইব্রীড দ্বারা উপজেলা কমিটি গঠনের বিরোধীতা সহ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের প্রবীন এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন
আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের কমিটি একতরফা করা হয়েছে,বিএনপি থেকে আগত দল ছুট হাইব্রীড নেতাদের জায়গা হয়েছে কমিটিতে। আদিতমারি উপজেলা আওয়ামিলীগের সংগঠন এতে দুর্বল হবে এবং ত্যাগিরা পদবঞ্চিত হয়েছে।আগামী নির্বাচন পযন্ত এই দ্বন্দ্ব বিরাজমান থাকলে ভোট কেন্দ্রে নৌকার ভোট রক্ষা করা কষ্ট কর হবে বলে মনে করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের তৃনমুল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।