শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে : আদালতের রায়ে জরিমানা ও সংযোগ বিচ্ছিন্নকরন ফি দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া মিটারে বিউবো গৌরীপুর বিদ্যুৎ সরবরাহের কার্যালয় থেকে দেয়া হয়েছে ৮লাখ ৮৮হাজার ৫৩৩টাকার বিদ্যুৎ বিল। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বেকারকান্দা গ্রামের মৃত মীর হোসেনের পুত্র কৃষক মো. সাইফুল ইসলামের সেচের মিটারে। সেই ভৌতিক বিল থেকে মুক্তি পেতে তিনি ঘুরছেন বিভিন্ন দপ্তরের টেবিলে টেবিলে।
সরজমিন ও কাগজপত্রে দেখা যায়, বেকারকান্দা গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম নিজের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য একটি সেচ লাইন সংযোগ নেন। তাঁর সেচ মিটার নং ই-২৮৬৯৪০, গ্রাহক নং ৭৫৭৪৪৫৩৮, হিসাব নং ৩১৩/৪২৯৪। উক্ত সংযোগে ২০১৯সনের ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৩৫হাজার ২৪টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তৎকালীন আবাসিক প্রকৌশলী (সহঃপ্রকৌ) মো. তহুর উদ্দিন। ওই কর্মকর্তা এ বছরেই ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ আদালতের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ কৃষকের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে সেচ পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলনের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে কৃষক মো. সাইফুল ইসলামকে বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া ২৩হাজার ২০০ইউনিটের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ৩৫হাজার ৮৭টাকা ৪মার্চ এবং আদালতের ধার্য্যকৃত জরিমানা ১হাজার ৮টাকা ও বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্নের আরসি/ডিসির জন্য ৬শ টাকা ওই বছরের ১১মার্চ জমা দেন। যদিও তিনি এ সময় ব্যবহার করেছিলেন ২২হাজার ৫০৪ইউনিট বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ৭৯৫ইউনিট বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল প্রদানে বাধ্য হন এই কৃষক। এরপর থেকেই ওই বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে মিটারটি তারবিহীন অবস্থায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুলতে থাকে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন মিটারটিতে জং ধরছে। খুঁটিতে থাকা কাঠও পচে গেছে।
প্রায় দুই বছর পর ২০২১সালের এপ্রিল মাস থেকে মৃত এই মিটারে আবার বিল আসতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে ২২হাজার ২৫০টাকা, মে মাসে ২হাজার ৬৮৪টাকা, জুন মাসে ২হাজার ৬৮৪টাকা, জুলাই মাসে ৪লাখ ১৬হাজার ১৮৭ টাকা, আগস্টে ২৩হাজার ৩৫৯টাকা, সেপ্টেম্বরে ১লাখ ৩৭হাজার ৩০৮টাকা, অক্টোবরে ১লাখ ৩৯হাজার ১৭৯টাকা, নভেম্বরে ১লাখ ৩৯হাজার ৮৩৯টাকা এবং ডিসেম্বর মাসে ১হাজার ৭২৪টাকা বিল আসে।
এ প্রসঙ্গে কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী বরাবরে ভৌতিক বিদ্যুৎ থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করেছি। কোনো সমাধান দেননি। তার স্ত্রী মোছা. রওশনারা আক্তার বলেন, এই বিলের জন্যে ঘুরতে ঘুরতে আমার স্বামী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। টেনশনে রাতে ঘুমাতে পারেনা। আমার ছেলের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, কৃষকের আবেদন নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিলটি সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গ্রাহক হয়রাণি ও ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল তৈরি সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকা-ের কারণে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর শাখার সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ভৌতিক বিলের এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। গ্রাহকদেরকে হয়রানির সঙ্গে জড়িত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুতসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব প্রয়োজন।
উল্লেখ্য এ দপ্তর এর আগেও উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মুদি দোকানী মো. হেলাল উদ্দিনকে ২০২০সালের নভেম্বর মাসে ৯লাখ ২৪হাজার ৩২৭টাকার বিদ্যুৎ বিল প্রদান করে। এ ঘটনাটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশি হলে তদন্ত আর নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই মুদি দোকানী রেহাই পান।