শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : নদীমাতৃক বাংলাদেশের সর্বত্রই জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। ময়মনসিংহ গৌরীপুর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত সুরিয়া নদী এক সময় সারা বছর পানিতে টইটম্বুর থাকতো। নদীর বুকে পাল তুলে চলত ছোট বড় শত শত নৌকা। দুই পাড়ের কৃষকরা ফসলি জমিতে সেচ দিতেন এই নদী থেকে। বর্তমানে দখল ও দূষণে নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে নদীটি। স্নিগ্ধ, স্রোতস্বিনী সুরিয়ার সেই জৌলুস আর নেই। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে এখন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে।
নদীর দুই পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় সুরিয়া নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে থাকতো প্রচুর পরিমান পানি। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করা যেত। বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে এখন আর সেচ দেয়ার মত পানি থাকে না। দুই তীরে যাদের জমি রয়েছে তারাই নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে।
উপজেলার অচিন্তপুর ও মাওহা ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, নদীর যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে তা এখন দখল ও দূষণের কবলে। পুরো নদীটি ধানের জমিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় সুরিয়ার এই অবস্থা চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুরিয়া নদীটি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নেত্রকোনা জেলার হাওড় অঞ্চলে গিয়ে মিশেছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি নদীর কুঁড়ের (গভীর) অংশ শুকিয়ে মাছ ধরে ও বাকী অংশে ধান চাষ করেছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন নীরব থাকায় নদীর উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, ছোট সময় দেখেছি নদীটি ৩৫ থেকে ৪০ ফুট চওড়া ছিল। দখল ও দুষণের কারণে এখন তা সরু হয়ে গেছে। দ্রুত খননের দাবী জানাচ্ছি।
এলাকাবাসী আজহারুল ইসলাম বলেন, নদীটি দখল আর দুষণের কারণে সরু হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না আবার বর্ষাকালে উজানের পানি এসে জমি, বড়িঘর ও রাস্তাঘাট ভাঙ্গনের শিকার হয়। দ্রুত দখলমুক্ত করে খননের দাবী জানাচ্ছি।
মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল ফারুক বলেন, ছোট বেলায় দেখছি নদীটি অনেক গভীর ছিল। খনন না করা হলে কয়েক বছর পর হয়ত আগামী প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে চাইবে না সুরিয়া নামে একটি নদী ছিল। নদীটি পুনঃখনন না করায় বর্তমানে ধানসহ বিভিন্ন ধরণের চাষ করা হচ্ছে। নদীটি পূনঃখননের দাবী জানান তিনি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, আগামী উপজেলা সমন্বয় সভায় নদী খনন বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।