শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর ও জাহাঙ্গীর আলম, ফুলপুর থেকে : নিজের জমি নেই, অন্যের জমি চাষ করে সংসার চালায় রফিকুল ইসলাম। এলাকায় ‘বর্গাচাষী রফিক’ নামে পরিচিত। সেই বর্গাচাষীর দু’কন্যা আছিয়া এবং আয়েশা এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। দু’বোন হতে চায় ডাক্তার। কন্যাদের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শংকায় দিন কাটছে এই বর্গাচাষীর। ওদের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার লালমা গ্রামে।
দু’বোনের সাফল্যে এখন লালমা গ্রামের সবার মুখে মুখে। রফিকের জীর্ণ কুটিরটি বিদ্যার ভান্ডার নামে খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছে। এই গৃহের বড় মেয়ে ফারিয়া আক্তার রিংকু জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে। এখন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের মাস্টার্স পড়ছে।
অপর দুই মেয়ে আছিয়া খাতুন আর আয়েশা খাতুন। ২০১৬সনে আছিয়া ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় ১২তম ও আয়শা ৪৪তম স্থান অর্জন। আছিয়া ময়মনসিংহ জেলার হাজারো শিক্ষার্থীদের পিছনে ফেলে প্রথম হয়। কিন্তু এ সাফল্যের প্রদীপ শিখায় উনুন দিতে অনেকটাই ব্যর্থ হন তার পরিবার। বর্গাচাষী বাবা নিজের জমি চাষের পাশাপাশি দিনমজুর হিসেবেও কাজ করে। তারপরও সবার খরচ যোগান সম্ভব হয়নি। কোনো প্রাইভেট আর কোচিংয়ে পড়ার সুযোগও পায়নি তারা। চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯সনে এসএসসিতে আছিয়া জিপিএ ৪.৮৯ ও আয়েশা পায় ৪.৬১ পয়েন্ট।
এরপর দু’বোন ভর্তি হয় শম্ভুগঞ্জ জেকেপি কলেজে। দু’বোনেই এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়। তাদের এ অর্জনে আবারও আনন্দ বইছে লালমা গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র রফিকুল ইসলামের গৃহে। কন্যাদের সাফল্যে উৎফুল্লিত মা ফরিদা আক্তার। তিনিও পেশায় গৃহিনী। ক্ষনিকের মধ্যে এ সাফল্যের উৎফুল্লতা কেড়ে নিয়েছে দুঃচিন্তা। দু’কন্যা মেডিকেলে ভর্তির জন্য উদগ্রীব। সেই লক্ষ্যে নির্ঘুম নিরলস অধ্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ স্বপ্ন নিয়ে শংকায় বাবা-মা।
তাদের আরেক ছেলে জুনাইদ হাসান অপু চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
রফিকুল ইসলাম জানান, রেজাল্টের রাতে প্রচন্ড শীত ছিলো। বোর ক্ষেতে পানি দিতে গেলাম আমার শীত লাগছে না, পানি ভর্তি ক্ষেতে পানি দিচ্ছি, বাড়ির রাস্তা দিয়ে ৩বার এসেছি, তাও বাড়িতে আসতে পাড়ি নাই। কেমন জানি ‘এলোমেলো’ লাগছে। সেই রাতে আর ঘুম হয়নি। ফরিদা আক্তার বলেন, ছেলে-মেয়েদের সাফল্যের জন্যে ওরা ওদের কাজটা করছে। আমরা তো ওদেরকে তালাবী (প্রয়োজনীয় অর্থ, টাকা, বই-কলম) দিতে পারছি না।
ওদের সাফল্য প্রসঙ্গে আনন্দশ্রু ঝরছে দাদা আব্দুর রহমানের (৮০)। তিনি বলেন, আমার সন্তানের সেই সামর্থ্য নেই। তারপরও ওদের এতো ভালো রেজাল্ট, সব আল্লাহ’র ইচ্ছা। চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রমজান আলী আকন্দ বলেন, প্রাইভেট কোচিং পড়ার সামর্থ্য নেই। এমন অভাবনীয় সাফল্যে সত্যিই আমরা গর্বিত। শতভাগ ক্লাসে উপস্থিতি, ওদের পরিশ্রম এ সাফল্য এনে দিয়েছে। ###