এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার চাঞ্চল্যকর নারী শিশু নির্যাতন মামলা ১ নং আসামী আশিকুর জামান ( ২২) এর জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে লালমনিরহাট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) লালমনিরহাট জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এই রায় দেন।
এজাহার মূলে জানা যায় গত ০৫/০৪ ২২ ই্ং ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক, ৮ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া রিপা বেগম (১৯) ও আশিকুর জামানের (২২) বিবাহ হয়। ছেলের বাবা লোভী বিধায় বিবাহ মজলিশে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করেন মেয়ের বাবা গরীব হওয়ায় নগদ টাকা দিতে না পারায় বিবাহ ভাঙ্গার উপক্রম হলে স্থানীয় লোক জনের সমোঝতায় মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গলার্থে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গিকার করেন। এর ফলে বিবাহ মজলিশে নগদ ১ লক্ষ টাকা যৌতক বাবদ ছেলের বাবা আমির হোসেনকে সকলের সামনে প্রদান করেন এবং ৪ লক্ষ টাকা তিন মাসের মধ্যে দেওয়ার অঙ্গিকার করেন। শুরু হয় রিপা ও আশিকুরের সংসার জীবন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে রিপা আক্তার (১৯), পিতা-আব্দুল কালাম ও আশিকুর জামান (২২), পিতা- আমির হোসেন, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আশিকুরজামান কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র ও রিপাত আক্তার লালমনিরহাট সরকারী কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী। তাদের মধ্যে পূর্ব থেকে পরিচয় ছিল বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিবাহের দুমাস পার হতে না হতেই স্ত্রী রিপার উপর শুরু হয় পাষবিক নির্যাতন। যৌতুকের টাকার জন্য প্রায় প্রতি রাতে স্ত্রী রিপা কে শারীরিক নির্যাতন ও মার ডাং করত স্বামী আশিকুর জামান। তার একটাই উদ্দেশ্য যৌতুকের বাকি ৪ লক্ষ টাকা। এক পর্যায়ে রিপার শাশুরী আইরিন বেগম (৪০) ছেলেকে হুকুম দিয়ে বলতো টাকা না আনলে মেরে হাড় গুরা করে দে আসামী আশিকুর জামান তার মা,ও বাবা মিলে প্রতি রাতে স্ত্রী রিপার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতনের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছালে রিপা তার মা এ বাবা কে অন্যের দ্বারা বিষয়টি অবগত করান। সেই করাণে ৩রা মার্চ সকালে প্রচন্ড মার ডাং ও শাসরুদ্ধ করে ফোলা যখম, ও কপালে স্বজোরে আঘাত করেন।
রিপা জ্ঞান হারালে স্থানীয় লোক জন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স এ ভর্তি করান, যাহার রেজিঃ- ৬০৫৫১১ ভর্তি রেজিঃ ৬/২৭১৯, চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সুস্থ হয়ে আবার ও স্বামীর সংসার ফিরে যাবার আশায় স্থানীয় লোক জনের সহায়তা নিয়ে সমোঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন স্ত্রী রিপা।
আদিতমারী থানা পুলিশ বিষটি আমলে নিয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইন (২০০০) এর ১১ (খ)/৩০ ধারায় আশিকুর জামান সহ-তার বাবা আমীর হোসেন (৪৫) মা, আইরিন বেগম (৪০) কে আসামী করে আদিতমারী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং জি,আর-আদিত ১৭৫/২২।
আসামী পক্ষ গভীর জ্বলের মাছ ও চালাক হওয়ায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন গ্রহন করেন। জামিন পেয়ে আসামী গন স্ত্রী রিপাকে মামলা তোলার জন্য প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করতে থাকেন, না উঠালে প্রাণে শেষ করে দেবেন অথবা প্রকাশ্যে দিবা লোকে এসিড মেরে সারা শরীর ঝলশে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। মর্মে বাদিনী রিপার প্রাণ সংশয় রয়েছে বলে লালমনিরহাট কোর্টে এসে আসামিদের বিরুদ্ধে গত ১৩ অক্টোবর তাদের আক্রোশ থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে মামলা দায়ের করেন। যাহার পিটিশন মামলা নং-১৫৫/২২।
এদিকে গত ১৮ অক্টোবর আসামী আশিকুর সহ বাকি দুইজন জামিনের জন্য চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে জামিনের আবেদন করেন। সমস্ত কাগজ প্রত্রাদি পুলিশ রিপোর্ট চার্জশীট মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখে ১ নং আসামী আশিকুর জামান (২২) কে জেল হাজতে প্রেরণ করেন লালমনিরহাট চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট। বাকি দুই আসামী কে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাদিনী রিপা আকতার ও তার পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হলে তিনি ঘটনার সকল সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিক কে বলেন, আসামী গন যেন সর্বচ্ছ শাস্তি পায় এ ব্যাপারে মাননী প্রধান মন্ত্রীর কৃপা দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাদিনী ও তার পরিবার।
সৃষ্ট ঘটনায় আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোক্তারুল ইসলামের সংগে মুঠো ফোনে আলোচনা হলে তিনি বলেন, আমরা মামলার সত্যতা পেয়েছি সেভাবে মামলার চার্জশীট করে কোর্টে পাটিয়েছি।