শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ -ইউএনও মাহমুদা মাসুম

Reporter Name / ১৫১ Time View প্রিন্ট / ই-পেপার প্রিন্ট / ই-পেপার
Update : বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:৫২ অপরাহ্ণ

এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট

সূর্যালোক যদি কোথাও প্রবেশ করতে না পারে তাহলে যেমন দিন রাত্রির পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে তেমনি শিক্ষা বঞ্চিত মানুষও সুনাগরিক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সামিল করতে ব্যর্থ হন। শিক্ষার সুদূর প্রসারি লক্ষ্য হল মানুয়ের অন্তর্নিহিত শক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে তাকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসাবে এবং মানুষ ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার যোগ্য করে গড়ে তোলা । অনানুষ্ঠানিক পারিবারিক শিক্ষার পরেই শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সূতিকাগার হল প্রাথমিক শিক্ষান্তর বা বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিচিত পারিবারিক গণ্ডির বাইরে শিশু যখন শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে প্রথম আসে তখন তার মধ্যে থাকে নানা রকম জড়তা আড়ষ্টতা, দ্বিধা, ভয়। বিদ্যালয়ের নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকবৃন্দের আন্তরিক অভর্থনায় এবং সন্তান তুল্য মেহের ছায়ায় শিশুর যাবতীয় দ্বিধা ভয় দূরিভূত হয়ে সে হয়ে ওঠে বিদ্যালয়ের একজন স্বতস্ফুর্ত শিক্ষার্থী। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো অনুসরণ করে চলতে থাকে পাঠদান কার্যক্রম। একজন শিশুকে শুধু অ আ, ক,খ, ABCD শিখিয়ে কিংবা সংখ্যা গণনার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই শিক্ষকের কর্তব্য শেষ হয়না। শিশুকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিশ্বের উপযোগী হয়ে ওঠার পথেরও সন্ধান দিতে হয় তার বয়স ও সামর্থ বিবেচনায়। একটি বাক্যে লিখিত প্রাথমিক শিক্ষার যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যেও বা বাক্যেও শেষাংশে লেখা “উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা” (শিশুকে)। এই যে উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শন এই স্বপ্ন দর্শন আসলে কী? এই স্বপ্ন দর্শন হল শিশুকে আত্মজাগরণের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করা। আত্মনির্ভরশীল বক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠবার যে পথ সেই পথে। অবিচল থাকার দৃঢ় মানস গঠনে সাহায্য করা এবং উন্নত জীবনের সূচকের সাথে শিশুর পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়া। শিশুর মনে ও মস্তিষ্কে এই স্বপ্নও গ্রোথিত করা যে, সে শুধু নিজের ভাল মন্দ নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই জন্মগ্রহণ করেনি। তার জন্মেও রয়েছে মহৎ উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য হল তার কর্মের মাধ্যমে একটি সমাজ, একটি দেশ অথবা পুরো পৃথিবী ধাবিত হতে পারে একটি কল্যাণকর অভিযাত্রায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা কেবলমাত্র পাঠ্যপুস্তক পড়েই শিক্ষা অর্জন করে তা নয়। তারা পাঠ্য বিষয়বস্তুর আলোকে কায়িক পরিশ্রম করে ও নানা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করে, যা পরবর্তীতে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রবাব বিস্তার করে থাকে। বিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিশুদের এই শারীরিক শ্রমের ফলে কাজের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হয় এবং কোন কাজকে তারা ছোট মনে করেনা। পাঠ্যসূচি এবং ক্লাসরুটিন অনুসরণপূর্বক শিশুদের শারীরিক শ্রম ঘনিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি শিক্ষকরা যত্নশীল হলে তাদের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি তারা শ্রম সহিষ্ণু হয়ে উঠবে। আর এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য সাধিত হবে। “নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদা উপলব্দি ও আত্মমর্যাদা বিকশিত হওয়া। ” প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যে শিশুর যেসব ক্ষেত্রে বিকাশের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে মানবিক ক্ষেত্রটি অন্যতম। বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কাবিং, স্টুডেন্ট কাউনসিল, খুদে ডাক্তার কার্যক্রমে অংশগ্রহনের মাধ্যমে পারস্পারিক মেলামেশা, কথাবার্তা, ভাবের আদান প্রদান, অপরের সাথে আসন ভাগাভাগি করে বসার মাধ্যমে শিশুর সামাজিকিকরণ হয় এবং সমানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত মানবিক গুণাবলি বিকাশ বিষয়ক কবিতা, গল্প, নিবন্ধপাঠ এবং শিক্ষক কর্তৃক এসবের ব্যখ্যা বিশ্লেষণের ধারাবাহিকতা শিক্ষার্থীর মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল,সুস্থসমাজ বিনির্মানে মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নাই।তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বলে জানান লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মাহামুদা মাসুম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com