অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সারা জীবন আগুন ও ধোঁয়ায় কাজ করতে হয়। এ জন্য এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনেকেই অবসর বয়সে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। এ কারণে আমরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আজীবন রেশন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া, এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত আয়োজনে অংশ নেন। অগ্নিনির্বাপণকারীদের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সকে সম্পূর্ণ সক্ষমতার সাথে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, সেবার ক্ষেত্র এবং কর্তব্যরতদের মর্যাদাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ আগুন লাগলে বা কোনো দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প বা কোনো কিছু ঘটলে অথবা কোনো ভবন ধসে গেলে ফায়ার সার্ভিসই সবার আগে ছুটে যায়। এমনকি কোনো জাহাজ বা লঞ্চ যখন দুর্ঘটনায় পড়ে তখনও এই ফায়ার সার্ভিসকেই আমরা পাই। তাই তাদেরকে আরও যুগোপযোগী করা একান্ত প্রয়োজন। আর সেই পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি। এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সেবার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপও আমরা গ্রহণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার উচ্চ ক্ষমতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয় সেই ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা আমরা দিয়েছিলাম তা এখন শেষ পর্যায়ে। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত তারা যেন উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পান সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেডি প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে কর্তব্যপালনকালে নিহত অগ্নিনির্বাপণকর্মীকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। আর এই সময়ই আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাই। এই মর্যাদাকে ধরে রেখেই আমরা ২০৪১ সালে সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের প্রত্যয় এবং লক্ষ্য।
সরকারের লক্ষ্য একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো আমাদের উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গিয়েছে। করোনা ভাইরাসের অভিঘাত, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা মোকাবেলায় এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জনের পরিবার সহ ৪৫ জন দমকল কর্মীর হাতে ৪টি কাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন।