পরিতোষ দাস, মদন(নেত্রকোনা) থেকেঃ যে নদীতে বছর জুড়ে পানির স্রোত প্রবাহিত হতো, চলতো পাল তোলা নৌকাসহ নানা রকম জলযান, অস্তিত্ব সংকটে নেত্রকোনার মদন উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধলাই নদী এখন পরিণত হয়েছে ফসলী জমিতে। নদীটি খননের সরকারের কোন উদ্যোগ নেই এমনটি অভিযোগ রয়েছে এলাকার সচেতন মহলের। এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা সংকটে এ নদী ফসলের মাঠ। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় ডোবায় পরিণত হয়েছে।
ফতেপুর অংশে মগড়া নদী থেকে বের হয়ে আসা পাশের উপজেলা কেন্দুয়ায় সাইডুলি নদীর সঙ্গে মিশেছে এ নদী। মদনের মানচিত্রে এক-দেড়শ গজ প্রশস্ত ধলাই নদী থাকলেও বাস্তবে এটি ফসলী জমি। এভাবে চলতে থাকলে এ নদীর অস্থিত্য হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে নদীটির বিভিন্ন জায়গায় সেতু দেখে কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে যে, সেখানে বড় নদী ছিল। এছাড়া ধলাই নদী চেনার তেমন কোনো আলামত এখন আর নেই। ধলাই মানে ফসলের বিশাল মাঠ। শুকনা মৌসুমে খেলার মাঠ।
গত কয়েক বছর আগেও এ নদীর পানি সেচ দিয়ে নদীর দুইপাশে থাকা শত শত একর বোরো জমি চাষাবাদ করতেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দেয়ার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই নাব্য সংকটে পড়েছে নদীটি। ফলে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমির মালিকরা সমস্ত নদী জুড়েই বোরো ধানের আবাদ করলেও নদীর পাশের শতশত বোরো জমিতে সেচ দিতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে দ্বিগুণ খরচে জমি সেচ দিতে হচ্ছে।
এছাড়া বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েক মাসব্যাপী নদীটির বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে নির্বিচারে মাছ নিধন করায় থেমে গেছে নদীর পানি প্রবাহ।
এক সময় ধলাই বুক বেয়ে বহু দূর-দূরান্ত থেকে মদন-কেন্দুয়া তাড়াইল লঞ্চ-স্টীমার ও পালতোলা নৌকা আসা-যাওয়া করত। ধান-পাট বোঝাই বড় বড় মালবাহী নৌকা আসত।
ধলাই নদীকে কেন্দ্র করে তাড়াইল, কেন্দুয়া, খালিয়াজুরী, ইটনা, মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ ভৈরবসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মদন উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম নদী পথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ধান, পাট, নারকেল ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল ভর্তি নৌকা আসত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।
উপজেলার চন্দ্রতলা গ্রামের কৃষক অতিক মিয়া, বকুল মিয়া, ইয়াছিন মিয়া স্বদেশ সংবাদকে কে বলেন, এই নদী দিয়া অনেক বড় বড় নৌকা চলত। মদন, তাড়াইল, কেন্দুয়া থেকে অনেক মালামাল নিয়ে আসা যাইত। নদী ভরাট হয়ে ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। বোরো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় নদীর পাড়ের শতশত জমিতে পানি দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় জমি গুলো ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয়। ফলে জমি রক্ষা করতে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিতে হয়। দ্রুত নদীটি খনন করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ স্বদেশ সংবাদকে বলেন, আমি নদীটি পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। উনারা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অচিরেই খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।