বহুল কাঙ্ক্ষিত তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে নয়া দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সাতটি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনসংক্রান্ত সমঝোতার কথা। দুই দেশের এই সমঝোতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন মোদি। বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীর উপর দুই দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে। স্থানীয় মানুষের জীবনযাপনও নির্ভর করে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের দক্ষিণ অসম উপকৃত হবে।
কুশিয়ারা নদীতে বাঁধসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। নদীটি বন্যাপ্রবণ। সম্প্রতি কুশিয়ারা নদীর দুই তীরের ভাঙন বাংলাদেশ সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। ভারত জানিয়েছে, কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি নিয়ে নেবে ভারত। এতে এই নদী থেকে হওয়া বন্যার সমস্যায় সিলেট অঞ্চল আর ভুগবে না বলেই আশা। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার কথাও বলেছেন মোদি। দ্বিতীয় সমঝোতাটি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। এর ফলে বাংলাদেশের রেলব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে মনে করছে ভারত। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেন যথাযথভাবে চালানোর যে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তি, তাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বিক ‘আইটি অ্যাপ্লিকেশেন’-এর ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে ভারত।
তৃতীয় সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, শুধু তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণেও সাহায্য করবে ভারত। এমওইউ অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীরা ভারতীয় রেলের ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।ভারত-বাংলাদেশের চতুর্থ সমঝোতায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের আরও উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আরও কুশলী হতে সাহায্য করবে ভারত।
পঞ্চম সমঝোতা স্মারক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত। ভারতের প্রধান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত সংস্থাগুলো বাংলাদেশের এ বিষয়ক মূল সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান করবে। ফলে একসঙ্গে আরও উন্নতির পথে এগোবে দুই দেশ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে। এই সমঝোতায় বলা হয়েছে, শিল্প গবেষণা সংক্রান্ত দুই দেশের সংস্থা নিজেদের মধ্যে গবেষণালব্ধ তথ্য আদান-প্রদান করবে। ৬ষ্ঠ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা করবে দুই দেশ।আর সপ্তম সমঝোতায় বলা হয়েছে, প্রসার ভারতী এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলবে।
এই সাতটি সমঝোতা স্মারক ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতার উল্লেখ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, আমরা তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি পরমাণু শক্তির মতো বিষয় অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম যা নিয়ে বেশি ভাবে, সে ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার কথাও ভেবেছি। এছাড়া ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন’ নিয়েও কথাবার্তা এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সমঝোতার জন্য ভারতে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে তিস্তা চুক্তির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার আশা, তিস্তা নিয়েও দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’