সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এক রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আজ ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী

Reporter Name / ৮ Time View
Update : শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ৮:২১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর-উত্তম, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী আজ শুক্রবার। বহুদলীয় গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং উৎপাদনমুখী রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিচিতি পেয়েছিলেন খুব কম সময়ে। রাষ্ট্র পরিচালনার পাঁচ বছরের মাথায় মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সেক্টর কমান্ডার।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। তার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, কর্মমুখরতা, নেতৃত্বের দৃঢ়তার গুণাবলি এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। মাত্র পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এই অল্প সময়েই তার ওপর সাধারণ মানুষের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি হয়েছিল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার ওপর মানুষের এই আস্থার কোনো কমতি ছিল না।

বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন এবং বিশ্বের দরবারে দ্রুত অগ্রসরমান দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে ঘাতকদের বুলেটে প্রাণ হারান ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এই রাষ্ট্রনায়ক। তিনি যে কত জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গিয়েছিল ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার জানাজায়। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ওই জানাজার পর সেদিন সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছিল ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনো ভালোবাসে তার কারণেই।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৫২ সালে তিনি করাচি একাডেমি স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি করাচিতে ডি. জে কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫৫ সালে সামরিক বাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। করাচিতে দুই বছর চাকরি করার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। এছাড়াও তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পযর্ন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার জন্য বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন। একই বছর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটার স্টাফ কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত, নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা ও মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি শুরু করলে জিয়াউর রহমান দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার জন্য নিজ নামে জেড ফোর্স গঠন করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হলে লাল সবুজের পতাকায় শোভিত স্বাধীন দেশে তিনি পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে ‘বীর-উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ক্যু ও পাল্টা ক্যুর মাধ্যমে দেশ যখন চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকটে নিপতিত, তখন জিয়াউর রহমান আবার দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লব ও সংহতির মধ্যদিয়ে তিনি গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পাদপীঠে আসীন করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরে ১৯৭৮ সালের ২৩ জুন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রথা বাতিল করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। গণমাধ্যমের ওপর থেকে সব কালাকানুন প্রত্যাহার করে মুক্ত-স্বাধীন গণমাধ্যম চালু করেন। একটি রাজনৈতিক সরকার যেখানে সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছিল তখন জাতির প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে আসা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী সৈনিক স্বাধীনতার অন্যতম মূলস্তম্ভ বহুদলীয় গণতন্ত্র জাতিকে উপহার দিয়ে মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার পথকে সুগম করেছিলেন। এখানেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন এবং তার রাজনৈতিক দর্শন ১৯ দফা কর্মসূচি অনুযায়ী বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেন।

বাংলাদেশের সংবিধানে প্রথমবারের মতো ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজনের প্রবর্তক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘ধর্মবিশ্বাসে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করা হয়।

নিজে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হলেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। বিভক্তির রাজনীতি দূর করে ঐক্যের রাজনীতির ডাক দেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন সত্যিকার স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। একটি বহুমাত্রিক সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়নের আগেই ঘাতকের বুলেটে প্রাণ হারান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com