নিজস্ব প্রতিবেদক: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় পুলিশের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অন্য ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়েছে। রবিবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের বেঞ্চ এই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) আবেদন মঞ্জুর ও দণ্ডিতদের আপিল খারিজ করে এই রায় দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন বহাল রাখা হয়েছে— বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। রায়ে খালাস প্রাপ্তরা হলেন— বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহর। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি মো. জেনারেল জসিম সরকার, মো আসাদ উদ্দিন।
আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মো. মনসুরুল হক চৌধুরী, মাহবুব শফিক, মো. শফিকুল ইসলাম রিপন, সারওয়ার আহমেদ, শুভ্রজিৎ ব্যানার্জি, শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, এস এম মাহবুবুল ইসলাম, মো. আমিনুল ইসলাম, বশির আহমেদ, আকরাম উদ্দিন শ্যামল।২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ২০২০ সালের ৫ আগস্ট বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান করে নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি।
এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় র্যাবকে। ২০২০ সালের ১৩ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে। একই দিন পুলিশের দায়ের করা মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত।
কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ধার্য দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। পরে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। ২০২২ সালের ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে বাকিদের খালাস দেন বিচারিক আদালত।
কোনো মামলায় বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে সে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। বিচারিক আদালতের রায়ের সাত দিনের মাথায় ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার যাবতীয় নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। আর বিচারিক আদালতের রায়ের দুই সপ্তাহের মাথায় খালাসের পাশাপাশি রায় বাতিল ও রদ চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন প্রদীপ-লিয়াকত। পরে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া দণ্ডিতরাও আপিল করেন। গত ২৩ এপ্রিল ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়।