জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড এখন অনিয়ম, জবাবদিহিহীনতা আর প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অপব্যবহারের অভিযোগে চরম বিতর্কে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রে আছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর রাব্বিক হাসান ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র। তাদের একছত্র আধিপত্য ও অদৃশ্য শক্তির কাছে হেরে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও। ডিএনসিকে তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে দেশী মদ বোতলজাতকরণ। এ ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অ্যালকোহল বিধিমালাকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেনা রাব্বিক হাসান। আর তার এসব অনৈতিক কাজকে সায় দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র।সম্প্রতি ১শ’এবং ৫শ’ এমএল বোতলজাতকরণের ক্ষেত্রে ডিএনসি হতে পেশীশক্তি ব্যবহার করে কান্ট্রি স্পিরিট বা দেশী মদ বোতলজাতকরণের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিন্তু বোটলিং লাইসেন্স নেওয়া হয়নি। সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মীর রাব্বিক হাসানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে গত এক বছর ধরে নিয়ম ভেঙে চলছে মদের বোতলজাতকরণ। কেরুতে মদের বোতলজাতকরণে ব্যবহৃত নতুন মেশিনের অনুমোদন ছিল শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য। ২০২৩ সালের অনুমোদনে বলা হয় মাত্র এক বছর মেয়াদে পরীক্ষামূলক উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হইয়েছে। কিন্তু সেই শর্ত ভেঙে নিয়মিতভাবে বাণিজ্যিকভাবে মদ বোতলজাত করা হচ্ছে, যা সরাসরি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিধি লঙ্ঘন।
সূত্রমতে, এ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ আইনে রিকশনের মাধ্যমে উচ্চ সুরাশক্তির এ্যালকোহল নিম্ম সূরাশক্তিতে এনে সরবরাহ করতে হলে ডিস্ট্রিলারির আঙ্গিনায় পৃথক বন্ডেড পণ্যাগার স্থাপন করার বিধান থাকলেও সেক্ষেত্রে কেরু কোম্পানীকে পৃথক একটি দেশী মদের বন্ডেড পণ্যাগার ও পাইকারি বিক্রয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বোটলিং ফি প্রদানের বিষয়ে বলা হলেও লাইসেন্স প্রদান, গ্রহন কিংবা পরবর্তী অর্থ বছরে কোন প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স নবায়ন হবে সে সম্পর্কে বলা হয়নি। উচ্চ সুরাশক্তির এ্যালকোহল নিম্ম শক্তিতে আনার পর ৩০/৪০ ডিগ্রি আন্ডার প্রুফ দেশী মদ বোতলজাত করে সরবরাহের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা লেভেলের রং ও ব্যাচ সংযুক্ত ছাড়াও দেশী মদ বোতলজাত করে পণ্যাগারে সরবরাহে কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ল্যাবে টেষ্টের রিপোর্টও প্রয়োজন। কিন্তু কেরুর এসব অমান্য করায় বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ চেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দর্শনার ডিস্ট্রিলারী অফিসার পরিদর্শক ছানোয়ার হোসেন গত ২৮ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। এ আবেদনের পর পরই গত ১২ মে ছানোয়ারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
কেরু এন্ড কোং (বিডি) এর গোপন সুত্রে জানা যায় যে, খুব তড়িঘড়ি করে আইনের বেড়াজালকে পাশ কাটিয়ে, নিয়িম-নিতির বালাই না করে সম্প্রতি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র দেশী মদ বোতলজাতকরণ কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন।এদিকে কেরুর কৃষিখাতে দেখা দিয়েছে আরেকটি বড় অনিয়ম। শত শত কৃষকের কাছ থেকে লিজে নেওয়া জমিতে দেওয়া হচ্ছে লোকসানী সবজির বীজ। কেরুর কুমড়া চাষ প্রকল্পে প্রতিবছরই লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা। তবুও সরকারি লিজ জমিতে তাদের দিয়ে কুমড়া চাষ করানো হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্থিরতা। প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতায় একাধিক কর্মকর্তা ও চিনিকল কর্মচারীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলি করা হয়েছে। যেসব পদে বদলি হচ্ছে, সেগুলোর অনুমোদনই নেই সরকারি কাঠামোতে। কেউ কেউ বদলির আদেশ হাতে পেয়েছেন মধ্যরাতে, কেউ আবার অফিসে এসে জেনেছেন নিজের বদলির খবর। এইসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই হাইকোর্টে রিট দায়ের হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে যারা মুখ খুলছেন, তাদের চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন আওয়ামী লীগের আমলে চরম সুবিধাভোগী, মহা দুর্নীতিবাজ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান লিপিকা ভদ্রকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ না করলে পুরোপুরি ধংসের মুখে পড়বে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টর।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর রাব্বিক হাসান বলেন, বোটলিং লাইসেন্সের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্ততরে আবেদন করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বদলি করা-কিংবা চাকরিচ্যুৎ করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। কুমড়া চাষে কাউকে জোর করা হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। নিয়ম মোতাবেক সব হচ্ছে। এখানে আমার কোন ভূমিকা নেই। চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড.লিপিকা ভদ্রকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কল করা হলেও তিনি বার বার ফোন কেটে দেন।