নিজস্ব প্রতিবেদক: শনিবার রাত থেকে রোববার দফায় দফায় রণবিজয়পুরের ব্যবসায়ী শহীদ খানের বাসায় হামলা চালায় স্থানীয় ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী ও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট এর দালাল এবং মেম্বার পদে আওয়ামীলীগের মনোনায়নপ্রত্যাশী আনোয়ার ও তার দলবল। কয়েক দফায় দেশীয় অস্ত্র দা বটি ও লাঠি নিয়ে জমিতে ঢুকে দখলের জন্য সাইনবোর্ড ফেলে দেয়া এবং বেড়া দেয়ার চেষ্টা করে আনোয়ার, তার ছেলে সাদমান, দুলাভাই শাজাহানসহ অন্তত ১০-১৫ জন। এসময় শহীদ বাধা দিলে তার উপর হামলা করে আনোয়ার ও তার লোকজন। বাড়ির ভেতর থেকে এসময় শহীদের স্ত্রী ছুটে এলে তাকে কোপানোর চেষ্টা করে আনোয়ারের স্ত্রী ও তার মেয়ে। শহীদ ও তার স্ত্রী সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকলে আশেপাশের বাসিন্দারা এসে আনোয়ার, তার পরিবার ও ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শহীদ ও তার স্ত্রীকে বাঁচায়। এসময় আনোয়ার তাদের সবাইকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় এবং সেখান থেকে সরে গিয়ে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ডেকে পাঠায়।
পুলিশ এলে এলাকাবাসীর সবার কাছ থেকে আনোয়ারের হামলার তথ্য, ও তার ঐ জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার তথ্য নিশ্চিত হয় এবং জমিটির নথি দেখে শহীদের মালিকানার বিষয়েও নিশ্চিত হয়। এরপর এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে জমি দখলের ঘুটি হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা না করার পরামর্শ দিয়ে তারা চলে যান। এরপর এলাকাবাসীকে ভয় দেখাতে সে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও একইভাবে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা বলে আনার পর তারা এসে জমির নথি দেখে, এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিসহ সবার সাথে কথা বলে। তাদের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর দলটি নিশ্চিত হয় যে জমিটি আইনগতভাবেই শহীদের সম্পত্তি। শহীদ জমিটি বৈধ মালিকদের কাছ থেকে কিনেছে এবং কেনার আগে থেকেই ঐ জমির পূর্ববর্তী মালিকের হয়ে জমিটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। সেই মালিকপক্ষ তাকে জমি বিক্রির পর বৈধভাবেই শহীদকে স্বত্ব বুঝিয়ে দিয়েও গেছে। এসব তথ্য , সাক্ষ্য নথি যাচাই করে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও জমিটির বর্তমান মালিক শহীদ ও তার পরিবারের উপর হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হয়। তারপর তারাও এমন অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দখলবাণিজ্যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের অপচেষ্টা না করতে বলে চলে যান। এরপরও শহীদ ও তার পরিবারকে এবং এলাকাবাসীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে এবং শহীদকে খুন হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো প্রত্যেককে মামলায় ফাঁসানো ও হামলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে শহীদ খান জানান, জমিটি এলাকার সবচেয়ে অভিজাত ও পুরনো পরিবারের বংশীয় জমি। কয়েক প্রজন্মের ওয়ারিশসূত্রে এবং নামজারি-খাজনা পরিশোধপূর্বকই জমিটি ভোগদখল করে আসছিলেন সেই অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরিন ও তার মা এবং বোন। ২০১৪ সালে তার বাবা আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের মৃত্যুর আগে তার হয়ে এবং তার মৃত্যুর পর ঢাকায় স্থায়ী তার স্ত্রী-সন্তানদের হয়ে জমিটি দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিলেন শেখ মোহাম্মদ আলী ও শহীদ খান। অবশেষে ঐ পরিবারের কাছে শহীদ খান জমিটি কেনার আগ্রহ জানালে তারা গত বুধবার জমিটি শহীদ ও তার স্বজনদের বিক্রি ও রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দলিলাদিসহ স্থানীয়দের বিক্রির বিষয়টি জানিয়ে দিয়ে, জমিটির দখলিস্বত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গত শনিবার ঢাকায় ফেরেন। শনিবার সন্ধ্যায় তারা ঢাকায় রওনা দেয়ার আগে থেকেই পাশের জমিতে নিজ বাড়ি ও রাস্তায় একটু পর পর শহীদ ও তার পরিবারের সদস্যদের হামলা করা, তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে আনোয়ার ও তার পরিবারের সদস্যরা। জীবননাশের হুমকি দেয়ায় এবং আনোয়ারের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পূর্বরেকর্ডের কথা বিবেচনায় এ নিয়ে শনিবারই বাগেরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির আবেদন জমা দেন শহীদ খান। তবে সেই খবর পেয়ে জমিটির পূর্ববর্তী মালিকের সন্ধ্যায় ঢাকায় রওনা দেয়ার পর থেকে শহীদের সেই বাড়িতে রাতভর ইটপাটকেল মেরে এবং সামনে রাস্তা দিয়ে দা বটিসহ শোডাউন করে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করে পরিবারটিকে। এরপরও তারা ভয়ে পালিয়ে না যাওয়ায় সকালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও ছেলে সাদমান, শ্যালক শাজাহানসহ কয়েকজন মিলে সরাসরি হামলা করে বাড়িটিতে। এসময় প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাদের বাঁচায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকদিন ধরেই এই জমি দখলের চেষ্টা করা এই আনোয়ার আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময়ের ছত্রছায়ায় থাকার কথা জানাতো এলাকার সবাইকে। সেসময় কয়েকদফায় জমির দারোয়ান ইউনুস ও অন্য কেয়ারটেকার শেখ মোহাম্মদ আলীর উপর হামলা করেও কখনোই গ্রেফতার হয়নি আনোয়ার। বরং ইউনূসকে পিটিয়ে এবং গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করতে গেলে এলাকার লোকজন বাঁচানোর পর ইউনূস ও কেয়ারটেকার আলী মামলা করে। তাতে ক্ষিপ্ত পরদিনই ঘরে ইউনুসকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েও দিতে চেষ্টা করে এই সন্ত্রাসী আনোয়ার। এমন কয়েকদফা হামলার পরও তখনকার স্থানীয় এমপি তন্ময় ও আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় আনোয়ার গং-কে কখনোই গ্রেফতারের সাহস পায়নি পুলিশ। এমনকি সুনির্দিষ্ট মামলায় র্যাব তার ছেলে সাদমানকে আটক করে থানায় দেয়ার পরপরই গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও শেখ তন্ময়ের পিএসের ফোনে তাকে তাৎক্ষনিক ছেড়ে দেয় সদর থানা পুলিশ। ছাড়া পেয়েই রাতে আবার জমিতে গিয়ে দারোয়ান ইউনুসকে হত্যার হুমকি ও এলাকায় আস্ফালন করে সে জানায় শেখ হাসিনার চাচা শেখ হেলাল তার রক্ষক। পাশের বাসার প্রতিবেশী মৃত মাসুম মাস্টারের বিধবা স্ত্রীর রাখা কেয়ারটেকাররা ইউনুসের পরিবারের সদস্য ছিল। তাই আনোয়ার গং ঐ জমির ঘরটিতে আগুন লাগানোর পর তারা ইউনূসকে বাঁচাতে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত ছিল আনোয়ার। এজন্য ঐ কেয়ারটেকার পরিবার বাইরে বেড়াতে গেলে খুলনায় বসবাসরত মাসুম মাস্টারের সেই বিধবা স্ত্রীর রেখে যাওয়া ঘর ভেঙে ঢুকে ডাকাতি করে আনোয়ার গংরা। সেখান থেকে দামি মালপত্র তুলে নিয়ে আসলেও আনোয়ারের আওয়ামী রক্ষক আছে জেনে এ বিষয়ে সেসময় নিরাপত্তাহীনতার কারণে একটি মামলা তো দূর, জিডি করারও সাহস পাননি নিরীহ সেই বিধবা স্ত্রী।
এরপর নিয়মিত হামলা ও হত্যাচেষ্টা এবং প্রশাসনের আওয়ামীপক্ষের হয়রানির মুখে পরিবারসহ ঐ ভূমিহীন শ্রমিক ইউনূসকে জমিটির দারোয়ান পদ ইস্তফা দিয়ে শুধু বাড়ি নয়, ঐ এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে ঐ ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী আনোয়ার ও তার সহযোগীরা। তবু শহীদ খান ও শেখ মোহাম্মদ আলী জমিটি রক্ষণাবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া ও বাড়িতে অবৈধ অনুপ্রবেশের পথে বাধা হয়ে থাকায় তাদের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে কখনো ভাড়াটে খুনী দিয়ে, কখনো আবার নিজেই কয়েকদফা হামলা করে আনোয়ার। রিকশাওয়ালার ছেলে থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগের ক্ষমতা ও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের জমি দখলের দালালিবাবদ দেয়া টাকা ব্যবহার করে অবৈধ দখলবাণিজ্য, নারী শিশুসহ মানবপাচার ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে ফুলেফেঁপে ওঠে আনোয়ার।পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তথ্যমতে, আনোয়ারের বিরুদ্ধে মানব পাচার, জমি দখলসহ নানা মামলাও আছে।
কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তির করা এসব মামলা থাকলেও আওয়ামী ছত্রছায়ায় থাকায় কোনদিন গ্রেফতার হয়নি সে। বরং ঐ অবৈধ অর্থ ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে সে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মেম্বার নির্বাচন করার ঘোষণাও দেয় এলাকায়। কিন্ত এরমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে বাচ্চু চেয়ারম্যান, নাসিরসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর হামলা করার জন্য অর্থায়নও করে আনোয়ার। এ আন্দোলন ঠেকাতে শেখ তন্ময়ের কাছেও স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের মাধ্যমে টাকা পাঠায় সে। বিনিময়ে আন্দোলন দমানোর পর ঐ রণবিজয়পুরের জমিটি থেকে বৈধ ওয়ারিশদের উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে তাকে দখল করে দিতে আবদার করে রাখে আনোয়ার। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তাৎক্ষনিক ভোল পাল্টে আনন্দমিছিলে যোগ দিতে গেলে স্থানীয় ছাত্র ও আওয়ামীলীগের নিপীড়নের শিকার ভূক্তভোগিরা তার শরীরে লাথি মেরে মিছিল থেকে বের করে দেয়। এরপর প্রথমে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরে স্থানীয় বিভিন্ন দলের নেতাদের অবৈধ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে সে এলাকায় ফিরে এসে আবার উৎপাত শুরু করে। এ দফায় সে রণবিজয়পুরের ঐ জমিটির কেয়ারটেকাররা পরিবারসহ বাইরে বেড়াতে গেলেই যখন তখন পাশের বাড়ি থেকে গোপনে ঢুকে ফলমূল, সাইনবোর্ড, ইট, টিন চুরি করতে থাকে। আওয়ামী আমলে নিজে হামলা করে আবার নিজেই ভূক্তভোগীদের বিরুদ্ধে করা ভূয়া মামলাগুলোতে এলাকার লোকজনকে টাকা সেধেও সে সাক্ষী বানাতে পারেনি। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে সাক্ষী পরিচয়ে লোক ভাড়া করে আনে আনোয়ার। জমিটির কাছেই বসবাস করা স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি জানান, মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে আনোয়ার তাকে লোভ দেখানো এবং হুমকি দেয়া- দুটিই করেছিল।কিন্ত তিনি আদালতে মিথ্যা বলতে রাজি হননি। পরে আনোয়ার আরেক মহিলাকে শিউলি সাজিয়ে বোরখা পরিয়ে ভাড়া করে এনে আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেয়ায় বলে ঙতিনি জানতে পারেন। আনোয়ারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে স্বীকার করার পর শিউলি প্রতিবাদ করে। তখন এ বিষয়ে মুখ খুললে তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয় আনোয়ার। শহীদ ও আলীর উপর হামলায় ও জমি দখলের অপচেষ্টায় বাধা দেয়ায় আনোয়ার স্থানীয় অপর ভূমিদস্যুদের সাহায্য নিয়ে বাড়িটির দুপাশের দুই প্রতিবেশী ইসহাক ও আগে ডাকাতির শিকার মৃত মাসুম মাস্টারের স্ত্রী- উভয়ের জমিই দখল করে নেয়ার ক্রমাগত হুমকিও দিয়ে চলছে। এলাকার বাসিন্দাদের তথ্য এবং জমির নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জমির পূর্ববর্তী মালিক সাদিয়া আফরিনের পূর্বপুরুষদের নামে বাগেরহাট জেলা ও উপজেলার অধীনে বি আর এস ১১৯ নং রণবিজয়পুর মৌজাধীন এস.এ ১৯২ নং খতিয়ান মোতাবেক বি আর এস ৬৯৮ নং খতিয়ানে ১.০৪ একর সম্পত্তি ও বি আর এস ৬৯৫ খতিয়ানে ১.৪৩ একর জমি রেকর্ড ছিল। বি আর এস ৬৯৮ খতিয়ানের ১.০৪ একর সম্পত্তিতে তার বাবা আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের নামে ২৫০ অংশে ০.২৬ একর সম্পত্তিতে স্বত্ববানা ভোগদখল থাকা অবস্থাতেই ১৯/১০/২০১৪ ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুকালে তিনি ১ স্ত্রী সৈয়দা তৈয়বা বেগম, ২ কন্যা (১.) অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরিন, (২.) নাদিয়া শারমিনকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার মেয়েরা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে নামজারি করে খাজনা পরিশোধপূর্বক এতবছর ভোগদখলে থাকেন।
পৈতৃকসূত্রে এই বাড়িমালিক সাদিয়া আফরিন ও তার পরিবার রাজধানীতে থাকায় তার নিযুক্ত কেয়ারটেকার আলী ও শহীদ সেখানে দেখাশোনা করে আসছিল।
মূলত নিউ বসুন্ধরা নামের রিয়েল এস্টেট ও “হায় হায়” কোম্পানিসহ নানা জমি দখলের কোম্পানির হয়ে বিভিন্ন জায়গার জমি অবৈধভাবে জবরদখল করে বিক্রির দালালি করে আনোয়ার। রাস্তার পাশে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা এই জমিটির প্রতি দীর্ঘদিন যাবত লোভ থেকে দখলের হীনমানসে সে ওয়ারিশদের বেআইনী হুমকিও দিয়ে আসছে। ২০১৪ সালে আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে তার কথা বলে জমিটি দখলের অপচেষ্টা করে সে।এজন্য আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর এই আনোয়ার ব্যাকডেটে একটি ভূয়া আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করে যা সম্পাদনের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১২ দেখায়। অথচ ২৮ তারিখ দিবাগত রাত অর্থ্যাৎ ২৯ তারিখ শুরুর প্রাক্কালে মাঝরাতেই আবু তৈয়ব আজিজুর রহমান আমেরিকার যাওয়ার পথে ফ্লাইটে যাত্রায় ছিলেন । ফ্লাইটে থাকা অবস্থায় সকালে ঢাকা বা বাগেরহাটে ফিরে এসে আমমোক্তারনামায় সই করা একেবারেই সম্ভব নয়। এরপর দলিলটি রেজিস্ট্রির তারিখ দেয়া হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে, যেদিন দাতা আবু তৈয়ব আজিজুর রহমান আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন।তিনি আমেরিকা থেকে ফিরে আসেন ১৩ জুলাই ২০১৩ তে যা তার পাসপোর্টে ভিসার সিলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।কাজেই আমেরিকায় অবস্থান করা অবস্থায় বাগেরহাটে এসে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব।এছাড়া আমমোক্তারনামা কোনভাবেই বিক্রয় দলিলও নয়। আবার সেই ভূয়া আমমোক্তারনামাতেও নেই বিক্রয়ের কোন উল্লেখ। তাছাড়া আইনত সেই ভূয়া আমমোক্তারনামাও দাতার মৃত্যুর পর অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে সবভাবেই প্রমাণ হয় দলিলটি জাল এবং সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অপকর্মের উদ্দেশ্যে সৃজিত । এভাবে ১১ বছর ধরে অসংখ্য হামলা,হুমকি, দেয়াল ভাঙা,টিনচুরিসহ নানাভাবে জমিটি দখল করতে চেষ্টা করে স্থানীয় সন্ত্রাসী আনোয়ার। এ নিয়ে কয়েক দফা জিডিও করেন বাড়ি মালিকপক্ষ। এরপরও দখলে সফল না হওয়ায় এবার আনোয়ার প্রতারণার নতুন পথ বের করে।
আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ অর্থ্যাৎ তৃতীয় ভাই সাহাদাতুর রহমান পরিবারসমেত ৩০ বছরের অধিক সময় স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করেন এবং বাগেরহাটে আসেন না। সবশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে শাহাদাতুর রহমানের আমমোক্তার হইতে বেআইনী প্রক্রিয়ায় নালিশী সম্পত্তি খরিদ দেখিয়ে তার বড় ভাই আবু তৈয়ব আজিজুর রহমান ও তার ওয়ারিশদের দখল, দাখিলায় থাকা সেই একই সম্পত্তি নতুনভাবে আবারও দখল করার চেষ্টা করে। সাহাদাতুর রহমানের ঢাকা থেকে সম্পাদিত বলে দেখানো আমমোক্তারনামা দলিলটিতে কোন সুনির্দিষ্ট চৌহদ্দী উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে আনোয়ার নিজের আত্মীয়ের সাথে যোগসাজশ করে বানানো দলিলে মনগড়া এবং অন্যের চৌহদ্দী দিয়ে মরহুম আবু তৈয়ব আজিজুর রহমানের বিধবা স্ত্রী এবং এতিম মেয়েদের হয়রানি শুরু করে। যদিও সেই দলিলেও চৌহদ্দী ভুল দেয় সে। আনোয়ার বা আমমোক্তারদাতা সাহাদাতুর রহমান কারোরই ঐ চৌহদ্দী মোতাবেক নালিশী সম্পতিতে কোন ভোগদখল কখনোই ছিল না, এখনো নাই।
এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিটি অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরিন গং ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত ভিটাবাড়ি এবং তাতে তারা নামজারি, জমাভাগ করে কেয়ারটেকার নিয়োগ করে ভাড়াটিয়া বসিয়ে পাকা বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে ভোগদখলে ছিলেন। ২০২২ এ এই ওয়ারিশরা ঢাকায় নিজ নিজ র্কমক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন এমন তারিখে বাগেরহাটে মিথ্যা হামলার দাবি করে আনোয়ার জমিটি দখলের অপচেষ্টা থেকে একটি ১৪৪ ধারার মামলা করে । কিন্তু সেটি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় খারিজ হয়ে যাবে জানতে পেরে সেটি তুলে সে তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে এ নিয়ে আদালতে আরেকটি মামলা করে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চায় সে। কিন্তু সেটিও ভূয়া আমমোক্তারনামা ও সেটির অকার্যকারিতা , অন্য ওয়ারিশদেরও জমিটিতে কোন আইনগত ও দখলগত অধিকার প্রমাণ করতে না পারা বা কোন বন্টননামাও দেখাতে না পারায় আদালত আনোয়ারের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
এরপর সে সেই খারিজের তথ্য গোপন করে আদালতের সাথেও প্রতারণা করে ১৪৪ ধারার করা আগের মিথ্যা মামলাটি আবার মিসকেস করে তার শুনানি করে। কিন্তু সেটিও আদালত খারিজ করে দেয়। এরপরও কয়েক বছর ধরে আদালতে তার করা সবগুলো আবেদন খারিজের তথ্য গোগন করে , আইনের তোয়াক্কা না করে জায়গাটি যেকোনভাবে দখলে নিতে মরিয়া আনোয়ার। পাশাপাশি বছরের পর বছর সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, নিষেধাজ্ঞার সব আবেদন আদালত থেকে খারিজ করে দেয়ার তথ্য গোপন করে গণমাধ্যম, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতারণার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে ঐ জমি দখলের অপচেষ্টায় তাদের ব্যবহারের চেষ্টা করে আসছে আনোয়ার। প্রায়ই এলাকার বাইরের অচেনা সাধারণ মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জমিটি প্রতারণামূলকভাবে নিজের বলে দাবি করে অবৈধভাবে বিক্রির ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো আনোয়ার। এতে সাধারণ মানুষও তার প্রতারণার শিকার হবার শঙ্কা তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু শহীদ জমিটি কিনে নেয়ায় সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেল উপলব্ধি করে শহীদ ও তার পরিবারের প্রতি হিংস্র হয়ে উঠেছে আনোয়ার। এ পরিস্থিতিতে আনোয়ার যেকোন মুহূর্তে শহীদের নিজের ও পরিবারের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি বা ভূয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করবে -এমন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে রাখায় সরকার ও প্রশাসনের কাছে আইনগত অধিকার ও সুরক্ষা চান শহীদ ও তার স্বজনরা।