রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘যথাযথ অঞ্চল’-এ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপ-চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের বিবৃতি এতটাই উসকানিমূলক ছিল যে, আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি। কথার প্রভাব খুব গভীর, কারণ অনেক সময় এসব কথাই অনিচ্ছাকৃত বিপর্যয়ের জন্ম দেয়। আমি আশা করি, এবার তেমন কিছু ঘটবে না।
তবে সাবমেরিন দুটি কোন অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে, বা সেগুলো কেবল পারমাণবিক শক্তিচালিত, না কি পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত— সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি ট্রাম্প।ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে রাশিয়াকে দেওয়া ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আলটিমেটামের জবাবে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে হুমকি দিয়ে মন্তব্য করেছেন মেদভেদেভ। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তাকে ‘রাশিয়ার ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছেন।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে আরো লেখেন, ‘মেদভেদেভ এখনো নিজেকে প্রেসিডেন্ট ভাবেন।তাকে বলছি— কথার লাগাম দিন। তিনি বিপজ্জনক সীমানায় প্রবেশ করছেন। ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির জবাবে তীব্র কটাক্ষ করেন মেদভেদেভ। এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যেন ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’ সিরিজের কথা মনে রাখেন, আর ভুলে না যান সোভিয়েত আমলের ‘ডেড হ্যান্ড’ পারমাণবিক ব্যবস্থা কতটা ভয়ানক ছিল।
‘ডেড হ্যান্ড’ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি গোপন প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক ব্যবস্থা, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক হামলার পরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম ছিল বলে দাবি করা হয়। যদিও সোভিয়েত সরকার কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি, তবে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৮৫ সালে এটি মোতায়েন করা হয়েছিল এবং আজও রাশিয়ার হাতে তা রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে এক্স ও টেলিগ্রামে একের পর এক পোস্টে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণ শানাচ্ছেন মেদভেদেভ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের দেওয়া শান্তি প্রস্তাবের সময়সীমা ৫০ দিন থেকে ১২ দিন করার পর, মেদভেদেভ বলেন, ‘ট্রাম্প এখন রাশিয়ার সঙ্গে আল্টিমেটাম খেলছেন। প্রতিটি আল্টিমেটাম যুদ্ধের দিকেই একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে আরও বলেন, ‘উনি যেন ঘুমন্ত জো-এর (জো বাইডেন) পথ না ধরেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের এই তীব্র বাকযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় নয়, বরং এর ছায়া পড়তে পারে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও। বিশেষ করে যখন ‘পারমাণবিক সাবমেরিন’ ও ‘ডেড হ্যান্ড’-এর মতো সংবেদনশীল বিষয় আলোচনায় আসে, তখন সেটি নিছক কথার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না।