বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

সড়ক দুর্ঘটনা চোখের জলে একই পরিবারের ৭ জনকে শেষবিদায়

Reporter Name / ২৩ Time View
Update : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫, ২:৪৭ অপরাহ্ন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : প্রবাসফেরত বাহার উদ্দিনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের সাতজনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে বাদ আসর জানাজা শেষে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় কাশারি বাড়ির কবরস্থানে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়। নিহতরা হলেন প্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯) ও লামিয়া ইসলাম (৮), মা মোরশেদা বেগম (৫০), নানি ফয়জুন নেছা (৭০) ও ভাবি লাবনী আক্তার (২৫)।
ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফেরেন প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা, ভাবি সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন। বেঁচে ফেরা বাহার, আব্দুর রহিম ও ইস্কান্দার মির্জা জানান, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন প্রবাসী বাহার। তাকে আনতে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে পরিবারে ১১ সদস্য মাইক্রোবাসযোগে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বাহারকে নিয়ে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজারের জগদিশপুর এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটি ডুবে যায়নি। নৌকার মতো ভেসে ছিল।
ধীরে ধীরে গাড়িটি ডুবে যায়। এসময় গাড়ির লক খুলে দিতে বললেও চালক রাসেল তা করেননি। তিনি নিজে গাড়ির দরজার কাচ নামিয়ে বের হয়ে গেছেন। গাড়িতে আটকে থাকা কাউকেই উদ্ধারের চেষ্টা না করে পালিয়ে যান। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা, ভাবি সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন বের হয়ে আসেন। প্রবাসী বাহার উদ্দিন বলেন, ‌‘স্ত্রীকে চেষ্টা করেছি বের করার জন্য, কিন্তু সে মেয়েকে ছাড়া বের হয়নি। মাকেও বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তিনি নানিকে ছাড়া বের হননি। অনেক কষ্টে এক ভাবিকে বের করেছি। অন্যদেরকে চেষ্টা করেও বের করতে পারিনি। একে একে সবাই পানিতে ডুবে মারা গেলো।
তিনি বলেন, ‘চালককে বারবার বলেছি, গাড়ি থামিয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য, কিন্তু নিলো না। তার ঘুম আমার পুরো পরিবারকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। সে আমাদের ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছে।  আমার মেয়েকে বিমানবন্দরে প্রথম কোলে নিয়ে আদর করেছি। একটিবারের জন্যও বুঝতে পারিনি এটিই প্রথম এবং শেষ কোলে নেওয়া ছিল’, কান্না করতে করতে বলেন বাহার উদ্দিন।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, ‘এরকম হৃদয় বিদারক ঘটনা আমরা আগে দেখিনি। চালকের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে। সব চালক যেন গাড়ি চালানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করেন। চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘চালক ঘুমিয়ে পড়ায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। কয়েকজন বের হতে পারলেও সাতজন ভেতরে আটকা পড়ে মারা যান। তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো বাড়িতে নিয়ে গেছেন স্বজনরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com