গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় চুরির অপবাদ দিয়ে একটি কারখানার ভেতরে হৃদয় (১৯) নামে এক শ্রমিককে বেঁধে পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।মারধরের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৮ জুন) ভোরে কোনাবাড়ীর গ্রিনল্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হৃদয়। এ ঘটনায় হৃদয়ের বড় ভাই মো. লিটন মিয়া (৩৬) বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
হৃদয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানার শুকতারবাইদ এলাকার মৃত কাজীমদ্দীনের ছেলে। পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানাধীন হরিণাচালা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড গার্মেন্টসে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন হৃদয়। গত ২৮ জুন ভোরে কারখানার ভেতরে হৃদয়ের দুই হাত পেছনে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে কারখানার ভেতর ফেলে রাখে প্রতিষ্ঠানটির কতিপয় লোক। পরে সকালে অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে তার মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কোনাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে হৃদয়ের স্বজনরা খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করেন। জানা গেছে, মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনার পর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার (২৯ জুন) থেকে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
হৃদয়কে মারধরের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। তার জিনসের প্যান্টেও রক্তের দাগ লেগে ছিল। এ সময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই। ’
ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজনের হাতে কাঠের লাঠি ছিল। তখনো পিঠের দিকে হাত মুড়িয়ে মাঝে লাঠি জুড়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন হৃদয়। রশির একটি অংশ দিয়ে তার দুই পা–ও বাঁধা ছিল। ওই অবস্থায় কয়েকজন তাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হৃদয় ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিলেন না।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, একটি ভিডিওতে হৃদয়ের হাত পেছনে বেঁধে নির্যাতন করতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।