আজকের সাংবাদিকতার জগতে সত্যিকারের নীতিনিষ্ঠ সম্পাদক খুঁজে পাওয়া যেন দুষ্কর হয়ে উঠেছে। যিনি শুধু কলমের জোরে নয়, সাহসী অবস্থান, নৈতিক দৃঢ়তা ও সহকর্মীদের পাশে থাকার মধ্য দিয়ে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পারেন—তিনি নিঃসন্দেহে বিরল ব্যক্তিত্ব। ঠিক তেমনই একজন সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক, যিনি প্রতিদিনের কাগজ-এর সম্পাদক হিসেবে প্রমাণ করেছেন, সাংবাদিকতা এখনো সততা, ন্যায় ও সাহসের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
আপসহীন নীতি ও সাহসের প্রতীক
আমাদের চারপাশে অনেক সম্পাদক রয়েছেন, যারা নানা চাপের মুখে আপস করেন—কেউ বিজ্ঞাপনদাতার খাতিরে খবর পরিবর্তন করেন, কেউ আবার রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নীরব থাকেন। এমন বাস্তবতায় রফিকের মতো কেউ—যিনি ঝুঁকি জেনেও নিজের রিপোর্টারদের পাশে দাঁড়ান, অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করেন না এবং সত্য প্রকাশে অটল থাকেন—তাঁর উপস্থিতি সত্যিই ব্যতিক্রমী ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
সহকর্মীদের পাশে দৃঢ় অবস্থান
একজন সম্পাদক কেবল কাগজের নীতি নির্ধারণ করেন না, তিনি সহকর্মীদের জন্য নিরাপত্তার ছাতা হিসেবেও দাঁড়ান। খায়রুল আলম রফিক সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে সাংবাদিকরা জানেন—তাদের পাশে এমন একজন আছেন, যিনি কেবল পেশাগত নয়, নৈতিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও সবসময় তাদের সমর্থন করবেন।
গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডে রফিকের ভূমিকা
এই সত্য সবচেয়ে গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের পর। নির্মম সেই ঘটনায় একজন তরুণ সহকর্মীকে হারিয়ে পুরো সাংবাদিক সমাজ শোকাহত হয়েছিল। কিন্তু শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিলেন সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক। তুহিনকে তিনি শুধু সহকর্মী নয়, পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখেছিলেন। তাই হত্যার পর তিনি প্রকাশ্যে অঝোরে কেঁদে উঠেছিলেন এবং এক কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন—কতদিন আর সত্য বলার দায়ে সাংবাদিকদের রক্ত দিতে হবে?
শুধু শোকপ্রকাশেই থেমে থাকেননি তিনি; নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, সহকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর এই অবস্থান আবারও প্রমাণ করেছে—রফিকের কাছে সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি এক নৈতিক অঙ্গীকার, যা সহকর্মীদের জীবন-সংগ্রাম ও নিরাপত্তার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
সাংবাদিকতার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম
আজকের সময়ে সংবাদকে অনেকেই কেবল ব্যবসার পণ্য হিসেবে দেখেন। কিন্তু রফিক সংবাদপত্রকে সমাজের বিবেক হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁর দৃষ্টিতে সংবাদ শুধু তথ্য পরিবেশন নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করা, এবং জাতিকে সত্যের আলোয় আলোকিত করা।
কেন তিনি অনন্য
খায়রুল আলম রফিকের মতো সম্পাদকরা একদিকে সংবাদপত্রের মান বাড়ান, অন্যদিকে সাংবাদিকদের মনোবল, মর্যাদা ও নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেন। তাঁর নীতি ও সাহস আজকের তরুণ সাংবাদিকদের জন্য উদাহরণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সময় যত এগোচ্ছে, ততই এ ধরনের মানুষের সংখ্যা কমে আসছে।
আশার প্রতীক
সত্য হলো—যতক্ষণ পর্যন্ত খায়রুল আলম রফিকের মতো আপসহীন ও নীতিনিষ্ঠ সম্পাদক আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিকতার আশা কখনোই শেষ হবে না। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, সব চাপের মাঝেও সত্য প্রকাশ করা যায়, সততার সঙ্গে সাংবাদিকতা করা যায়, এবং সাংবাদিকতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।
লেখক:
সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম তপু
সহ-সম্পাদক দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ