• রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
  • |
  • English Version
  • |
নোটিশ:
২৪ ঘন্টায় লাইভ খবর পেতে চোখ রাখুন বিডি ২৪ ক্রাইম ওয়েবসাইটে...

ত্রিশালে জনবসতিপূর্ণ এলাকার পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, চরম জনদুর্ভোগ

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : / ১৫ Time View
Update : বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫

ত্রিশাল(ময়মনসিংহ)প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ত্রিশালে পৌরসভার (১নং ওয়ার্ড) নামাপাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিধিবহির্ভূতভাবে একটি পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে ওঠায় এবং যত্রতত্র ফার্মের মুরগির বিষ্ঠা ফেলার কারণে মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এতে ফার্ম সংলগ্ন বাসাবাড়ির মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

জনবসতি এলাকার ৫০০ গজ দূরত্বে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করার ফার্ম করার নিয়ম থাকলেও এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ,দর্শনীয় স্থান (কবি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র) এমনকি জনবসতির মধ্যেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গড়ে উঠেছে এই পোলট্রি ফার্ম। খামারের দুর্গন্ধযুক্ত মুরগির বিষ্ঠায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পঁচে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের পানি। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব্য। শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের নামাপাড়া এলাকায় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এনায়েত করিম আরিফ তার জায়গায় (ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা) ৩টি শেডের ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপন করে রেখেছে। বর্তমানে খামারে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় মুরগি রয়েছে। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলে খামারের পাশে খোলা পুকুরে, অন্যের জায়গায় মুরগির বিষ্ঠা ফেলা হচ্ছে। যার কারণে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে খামারের আশেপাশে প্রায় ২০/৩০টি পরিবার সহ অন্যান্য মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, একটি মুরগির খামার স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনগণের ক্ষতি হয় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা যাবে না।

খামারটির আশেপাশে মুরগির বিষ্ঠা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও দূর্বল। খামারের চারপাশে বসতবাড়ি। এসব বাড়ি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, খামারের মালিক এনায়েত করিম আরিফ দলীয় ক্ষমতার দাপটে নিয়ম না মেনেই এই মুরগীর খামার গড়ে তুলেছে। ভুক্তভোগীরা তাকে বারবার দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করার কথা বললে সে তাদের কথার তোয়াক্কা না করে সে উল্টো ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়।

একই এলাকার বাসিন্দা ও খামারের সাথেই থাকা ভুক্তভোগী জমির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি ও জমির পাশেই আরিফের খামার করেছে। খামারের বর্জ্য ও ময়লা পানি সে তার জায়গায় না দিয়ে আমার জমিতে ছেড়ে দিয়েছে। এতে আমার প্রায় ৩শধাধিক গাছের একটি কলাবাগান ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া আমার কয়েক একর ফসলী জমিতে এই বর্জের পানি ছড়িয়ে পড়ায় কোন ধরণের চাষাবাদ করতে পাচ্ছি না। বিগত সরকারের আমলে পৌরসভার মেয়রসহ প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেও কোন সমাধান পাইনি। আবারও আমাদের এই সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে এলাকাবাসীদের নিয়ে প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেছি।

এই এলাকার বাসিন্দা ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন সেই বিচুতিয়া ব্যাপারি বাড়ির হাফেজ মো. আবুল কাশেম বলেন, মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। নাকে-মুখে কাপড় চেপে পাড় হতে হয় এসব এলাকা। নিজেদের ঘরের দরজা-জানালাও বন্ধ করে থাকতে হয়। আর কোনোকিছু খেতে গেলে বমি হওয়ার অবস্থা হয়। তারা আরো জানান, মুরগির বিষ্ঠার কারণে পুকুর ও খালের পানি পচে যাচ্ছে। মশা-মাছি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পঁচা গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। যে কারণে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এই এলাকার মানুষ।

খামার মালিক এনায়েত করিম আরিফ জানান, আমি আমার নির্দিষ্ট জায়গাতেই বর্জ্য ফেলি। তাছাড়া সামনে একটি কালভার্ট ছিল, সেই কালভার্ট ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি যেতে পারছে না।

ত্রিশাল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজনিন সুলতানা বলেন, এই খামারটি প্রাণী সম্পদ অফিসের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত নয়। তাদেরকে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য সংবাদ পাঠালেও রেজিস্ট্রেশন করেনি।এই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

ময়মনসিংহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজিয়া উদ্দিন বলেন, খামারের জন্য জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট অথবা কম্পোস্টিং প্লান্ট বাধ্যতামূলক। যারা নীতিমালা উপেক্ষা করে খামার স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category